লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতার দাপটে
লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হতে চান স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বাবুল আনসারী
PUBLISHED: 24/10/2019,
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাবুল আনসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। ১৭ বছর সৌদিআরবে ছিলেন। সৌদিআরব থেকে ফিরে এসে দীর্ঘদিন ছিলেন বেকার। এরপর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বনে যান আওয়ামীলীগার। হঠাৎ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠনের থানা কমিটির পদ ভাগিয়ে নেয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় নানা অপকর্মের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারী বিলুপ্ত সন্ত্রাসী দিদার বাহিনীর সদস্যদের নিজের সহযোগী বানিয়ে অবাধে মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুল আনসারী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের ছোট ভল্লবপুর গ্রামের মোহাম্মদ সায়েদের ছেলে। তার অন্যতম সহযোগী খায়রুল বারী মিঠু ও কামাল মৃধা নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই হত্যা ও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। একাধিক মামলায় তারা গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত আসামি বলে পুলিশ জানায়।
খায়রুল বারী মিঠু চরশাহী ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মো. আবদুল বাক্বীর ছেলে। তিনি দিদার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা নিশাদ সেলিম হত্যাসহ প্রায় ৭/৮টি মামলার আসামি এই মিঠু।
কামাল মৃধা স্থানীয় একই ইউনিয়নের পূর্ব চরশাহী গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। আওয়ামী লীগ নেতা ইউসূফ আলী ওরফে নিশাদ সেলিম ও মান্নান ভূঁইয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এই কামাল মৃধা। তিনি ২টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলার আসামি।
অন্যদিকে সন্ত্রাসী বাহিনীর এই দুই সদস্য দীর্ঘদিন পলাতক থাকলেও এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়াও বাবুল আনসারীর অবৈধ বালু মহালের সঙ্গে কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মোহন জড়িত রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মোহন অবৈধ বালু মহালের চালান ভাউচার লেখার দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বাবুল আনসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তার অপকর্মে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি দলীয় পদপদবির দাপট দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হতে চান। যে কারণে বিলুপ্ত একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের নিজের সহযোগী বানিয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীকে সন্ত্রাসীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, সালিশ বাণিজ্য, জুয়ার আসর চালানো, সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি, মাদক কারবার ও কিশোর গ্যাং গঠনের মত গুরুত্বর অপরাধ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
স্থানীয় একটি ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, বাবুল আনসারী তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। পাকাঘর নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে বাবুল আনসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হাজী খলিলুর রহমান বলেন, সম্প্রতি পূর্ব চরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে গন্ডগোল করেছিল বাবুল আনসারী। তিনি ম্যানেজিং কমিটির পদ না পেয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আলাউদ্দিনের (পল্লী চিকিৎসক) উপর হামলা চালান। পরে এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি মহোদয় হস্তক্ষেপ করলে বাবুল আনসারী নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ দিকে গত সোমবার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারীর অবৈধভাবে সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ওই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন স্থানীয় তহসীলদার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন কার্যক্রম তহসীলদারকে পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি আবার বালু উত্তোলন করা হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বালু উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও তার অন্যান্য অপকর্ম এখনও থেমে নেই।
স্থানীয় দাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. জাফর আহমেদ জানান, খায়রুল বারী মিঠু ও কামাল মৃধা একাধিক মামলার পলাতক আসামি। তাদের পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। তবে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, বাবুল আনসারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
PUBLISHED: 24/10/2019,
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাবুল আনসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। ১৭ বছর সৌদিআরবে ছিলেন। সৌদিআরব থেকে ফিরে এসে দীর্ঘদিন ছিলেন বেকার। এরপর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বনে যান আওয়ামীলীগার। হঠাৎ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠনের থানা কমিটির পদ ভাগিয়ে নেয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় নানা অপকর্মের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারী বিলুপ্ত সন্ত্রাসী দিদার বাহিনীর সদস্যদের নিজের সহযোগী বানিয়ে অবাধে মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুল আনসারী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের ছোট ভল্লবপুর গ্রামের মোহাম্মদ সায়েদের ছেলে। তার অন্যতম সহযোগী খায়রুল বারী মিঠু ও কামাল মৃধা নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই হত্যা ও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। একাধিক মামলায় তারা গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত আসামি বলে পুলিশ জানায়।
খায়রুল বারী মিঠু চরশাহী ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মো. আবদুল বাক্বীর ছেলে। তিনি দিদার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা নিশাদ সেলিম হত্যাসহ প্রায় ৭/৮টি মামলার আসামি এই মিঠু।
কামাল মৃধা স্থানীয় একই ইউনিয়নের পূর্ব চরশাহী গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। আওয়ামী লীগ নেতা ইউসূফ আলী ওরফে নিশাদ সেলিম ও মান্নান ভূঁইয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এই কামাল মৃধা। তিনি ২টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলার আসামি।
অন্যদিকে সন্ত্রাসী বাহিনীর এই দুই সদস্য দীর্ঘদিন পলাতক থাকলেও এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়াও বাবুল আনসারীর অবৈধ বালু মহালের সঙ্গে কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মোহন জড়িত রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মোহন অবৈধ বালু মহালের চালান ভাউচার লেখার দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বাবুল আনসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তার অপকর্মে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি দলীয় পদপদবির দাপট দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হতে চান। যে কারণে বিলুপ্ত একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের নিজের সহযোগী বানিয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীকে সন্ত্রাসীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, সালিশ বাণিজ্য, জুয়ার আসর চালানো, সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি, মাদক কারবার ও কিশোর গ্যাং গঠনের মত গুরুত্বর অপরাধ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
স্থানীয় একটি ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, বাবুল আনসারী তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। পাকাঘর নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে বাবুল আনসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হাজী খলিলুর রহমান বলেন, সম্প্রতি পূর্ব চরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে গন্ডগোল করেছিল বাবুল আনসারী। তিনি ম্যানেজিং কমিটির পদ না পেয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আলাউদ্দিনের (পল্লী চিকিৎসক) উপর হামলা চালান। পরে এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি মহোদয় হস্তক্ষেপ করলে বাবুল আনসারী নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ দিকে গত সোমবার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারীর অবৈধভাবে সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ওই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন স্থানীয় তহসীলদার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন কার্যক্রম তহসীলদারকে পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি আবার বালু উত্তোলন করা হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বালু উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও তার অন্যান্য অপকর্ম এখনও থেমে নেই।
স্থানীয় দাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. জাফর আহমেদ জানান, খায়রুল বারী মিঠু ও কামাল মৃধা একাধিক মামলার পলাতক আসামি। তাদের পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। তবে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, বাবুল আনসারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments
Post a Comment